আজকে আমরা গাড়ি/যানবাহনের ইতিহাস নিয়ে একেবারে প্রাথমিক সময়গুলো থেকে বিস্তারিত জানব।
এমন একদিন ছিল, যখন শুধু ভারতবর্ষে নয় বরং সারা বিশ্বে গরু, ঘােড়া প্রভৃতি নানা ধরনের জন্তুর সাহায্যে যানবাহন চলাচল করত।
কিন্তু তারপর আবিস্কৃত হলাে, বিভিন্ন শক্তির সাহায্যে চালিত স্বয়ংযান শক্তিকে গতিশক্তিতে পরিণত করা যায়। এই ভিত্তির উপর নির্ভর করে প্রথম পেট্রোল ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন মহাত্মা হেনরি ফোর্ড। এভাবে অটোমোবাইল শিল্প গড়ে উঠে। তার সৃষ্ট মােটরগাড়ির প্যাটার্ন আর আজকের দিনের নানা আকৃতি মােটরযানের চেহারা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমনকি যে থিওরির উপরে নির্ভর করে তিনি তাঁর প্রথম মােটরযানটি চালু করেছিলেন তার সঙ্গে আজকের দিনের মােটরযান অনেক পার্থক্য।
আজকের দিনে নানা ধরনের অটোমোবাইল/ মােটরযান আবিস্কৃত হয়েছে। তবে তার মানে অন্তর্দাহ ইঞ্জিনযুক্ত (Internal combustion engine) মােটরগাড়িই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। অত্যন্ত হালকা ধরনের এই ইঞ্জিনযুক্ত মােরগাড়ির থেকে শুরু করে ।
এ পদ্ধতিতে লরি, বাস প্রভৃতি সব কিছুই তৈরি করা হয়।
মােটরগাড়িতে নানা ধরনের কলকব্জা থেকে শুরু করে ইঞ্জিন, বডি সব বিছু মিলিয়ে যে জটিল অংশ তাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।
১। মােটর গাড়ি চেসিস (Chassis): চেসিস হলাে মােটরগাড়ির নিচের অংশ যার সঙ্গে সংলগ্ন থাকে ইঞ্জিন, ইঞ্জিন চালাবার সর্বপ্রকার ব্যবস্থা ও তার
নিচে সংলগ্ন চাকা পর্যন্ত সবটুকু।
২। গাড়ির উপরের অংশ বা বডি (Body): এতে থাকে গাড়ির উপরে বাইরের আবরণ, দরজা, বসার সিট প্রভৃতি। আজকাল সকলেই বডির সঙ্গে বিদ্যুৎ কানেকশন যুক্ত করে গাড়ির ভেতরটা আলােকিত করেন। অনেকে ট্রানজিস্টার ওয়ারলেস সেট, ইলেকট্রিক ফ্যান প্রভৃতিও যুক্ত করেন।
আমি মনে করি, গাড়ির দেহ বা বডি সম্পর্কে কোনও আলােচনা করার প্রয়ােজন নেই।
তার কারণ বডির সঙ্গে গাড়ির গতির কোনও সম্পর্ক নেই। গাড়ির চালনা ও মােটরগাড়ির মেরামতি শিখতে হলে চেসিস বিশেষ করে ইঞ্জিন ও তার চালাবার ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশি করে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
চেসিসের নির্মাণের জন্য প্রথমে প্রয়ােজন হলাে গাড়ির ফ্রেম(Frame)। যার সঙ্গে ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশ ও চাকা প্রভৃতি যুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ চেসিসটি নির্মিত হয়।
চাকা অবশ্য প্রত্যক্ষভাবে গাড়ির সঙ্গে না আটকিয়ে প্রিং-এর মাধ্যমে আটকানো হয়। তার ফলে গাড়ি চলতে চলতে ধাক্কা খায় না। উচু-নীচু পথে ওঠা-নামা করলেও ভেতরের যাত্রীরা এই প্রিং-এরজন্য তা অনুভব করেন না।
উপরে একটি ফ্রেমের ছবি দেওয়া আছে। এই ফ্রেমটির সঙ্গে চাকা ইঞ্জিন ও বিভিন্ন অংশ যুক্ত হয়নি। এটি হলাে চেসিসের গােড়ার অংশ।
নিচে অন্তদাহ ইঞ্জিনযুক্ত একটি মােটরগাড়ির সম্পণ চেসিসের ছবি দেখানাে হলাে। এর সঙ্গে ইঞ্জিন, শ্যাফট, চাকা প্রভৃতি সবকিছু যুক্ত হয়ে তার সঙ্গে বডি যুক্ত হলে তা হয় একটি পূণাঙ্গ মােটরগাড়ি।
বাষ্পচালিত ইঞ্জিন বা স্টিম ইঞ্জিনঃ
স্টিম ইঞ্জিন সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী জেমস ওয়াট।
অটোমোবাইল শিল্প ও মােটরগাড়ির চালনপদ্ধতির শ্রেণীবিভাগঃ
অটোমোবাইল শিল্প কিভাবে বিবর্তন লাভ করে এবার তারই ধারাবাহিকতায় মােটরগাড়ি বা স্বয়ংচালিত গাড়ি কত ধরনের হয় তা বলা হচ্ছেঃ
বিভিন্ন ধরনের চালাবার পদ্ধতি অনুযায়ী এগুলির গঠন ও বিভিন্ন। গাড়ির চালন-পদ্ধতির পার্থক্য অনুযায়ী মােটরগাড়ি নানা ধরনের হয়ে থাকে। এখানে বিভিন্ন মোটরগাড়ি সম্পকে বলা হচ্ছে।
১। পেট্রোল ব্যবহারকারী মােটরগাড়ি ( Petrol engine):
এই ধরনের গাড়িতে পেট্রোল ইঞ্জিনই প্রধান। পেট্রোল ইঞ্জিনের শক্তি ও ক্ষমতাকে নানা যন্ত্রাদির সাহায্যে চাকার মধ্যে সঞ্চালিত করা হয় ও গাড়ি চলে।
২। পেট্রোল ও ইলেকট্রিক ব্যবহৃত মোটরগাড়ি (Petrol and Electric car ): এই মটরগাড়িতে যদিও পেট্রোল ও ইলেকট্রিক ব্যবহৃত হয়, তাহলেও এতে পেট্রোলই প্রধান। তবে এই মোটরে মুল ইঞ্জিনের গতিশক্তি প্রত্যক্ষভাবে চাকায় সঞ্চালিত না হয়ে তা একটি ডায়নামাের মাধ্যমে ইলেকট্রিসিটিতে রপান্তরিত হয় ও তার শক্তিতেই গাড়ি চলে। তাই একে পেট্রোল ইলেকট্রিক মােটরগাড়ি বলে।
৩। বৈদ্যুতিক মােটরগাড়ি (Electric car ): এই গাড়িতে কতগুলি বিদ্যুৎ বা ইলেকট্রিসিটির সঞ্চয়-কোষ থাকে। তাকে বলা হয় অ্যাকিউমুলেটার ( Accumulater)। এর সাহায্যেই বৈদ্যুতিক মােটরগাড়ি চলে। এটি অনেকে পছন্দ করেন। এবিষয়েও অল্প বর্ণনা করা হয়েছে।
৪। বাষ্পচালিত ইঞ্জিনযুক্ত মােটরগাড়ি (Steam engine car):
এই গাড়িতে জল থেকে বাষ্প তৈরি করে যে শক্তি তৈরি হয় তা গতিশক্তিতে রুপান্তরিত করা হয়। এই স্টীম ইঞ্জিন সাধারণতঃ রেলগাড়ি চালাবার জন্যে
ব্যবহৃত হয়। তবে অনেকে মােটরগাড়িতেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন।